এসএমএ রোগীর স্বাস্থ্যসেবা নির্দেশনা
এসএমএ (স্পাইনাল মাস্ক্যুলার অ্যাট্রফি) একটি বিরল স্নায়ুপেশীর রোগ। এসএমএ আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে সুশৃঙ্খলভাবে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। ‘কিউর এসএমএ বাংলাদেশ’ এসএমএ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা সুন্দরভাবে নিশ্চিত করার জন্য রোগী, রোগীর পরিচর্যাকারী ও এসএমএ চিকিৎসা কার্যক্রমে সংযুক্ত চিকিৎসকদের জন্য এ স্বাস্থ্যসেবা নির্দেশনাটি প্রস্তুত ভবিতরণ করছে। এ নির্দেশিকায় দেখানো হয়েছে মা-বাবা/অভিভাবক, চিকিৎসক, থেরাপিস্ট কীভাবে একজন এসএমএ রোগীর প্রতিদিনের স্বাস্থ্যপরিষেবা নিশ্চিত করবে। এসএমএ রোগীর নিয়মিত স্বাস্থ্যপরিষেবা ও শারীরিক-মানসিক যত্নের জন্য সার্বক্ষণিক একজন পরিচর্যাকারী (মা-বাবা/অভিভাবক/প্রশিক্ষিত সেবাদানকারী) থাকা জরুরি। একজন এসএমএ রোগীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দুই ধরনের চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করতে হবে। ক. এসএমএ-এর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা, খ. সহায়ক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা।
এসএমএ রোগীদের চিকিৎসাসেবা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের নিয়মিত যত্ন নেওয়ার এই নির্দেশিকাটি যৌথভাবে প্রস্তুত করেছেন বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ স্বনামধন্য চিকিৎসক ও 'কিউর এসএমএ বাংলাদেশ'-এর কর্মীবৃন্দ।
Scan to Donate Now

(ক) এসএমএ-এর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
জেনেটিক বা স্নায়ুগত ত্রুটির কারণে এসএমএ আক্রান্ত রোগীদের শরীরে এসএমএন (সার্ভাইভাল মটর নিউরন) নামক প্রোটিন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। আর এসএমএন প্রোটিনের অভাবে এসএমএ রোগ হয়ে থাকে, অর্থাৎ এসএমএ হওয়ার জন্য দায়ী হলো এসএমএন প্রোটিন উৎপাদনে অক্ষমতা। রোগীর শরীরে যদি ত্রুটিপূর্ণ জিনটির রিপ্লেসমেন্ট করা যায় বা এসএমএন নামক প্রোটিন সরবরাহ করা যায় তাহলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। তাই সম্ভব হলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক ওষুধ প্রয়োগ করার উদ্যোগ নিলে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে। এ ব্যাপারে রোগীর চিকিৎসা দানকারী ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।.
(খ) সহায়ক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
এসএমএ রোগের ওষুধ এদেশে সহজলভ্য নয় এবং তা এতই ব্যয়বহুল যে সাধারণ মানুষের সামর্থ্যসীমার অতীত। ফলে সবার পক্ষে ওষুধ সংগ্রহ করা সহজসাধ্য নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সাধারণভাবে ৩টি স্তরে সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে-
• অস্থি ও পেশীতন্ত্রের যত্ন (Musculoskeletal care): এসএমএ রোগীদের শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান হলো পেশী ও হাড়ের সমস্যা। নিয়মিত ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি পেশী ও হাড় সুস্থ রাখার অন্যতম উপায়।
• শ্বাসযন্ত্রের যত্ন (Respiratory care): এসএমএ রোগীদের একটি সাধারণ সমস্যা হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা। এসএমএ রোগীরা প্রতিনিয়ত এ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। তাই সবসময় শ্বাসযন্ত্রের যত্ন নিতে হবে।
• সাধারণ যত্ন ও পুষ্টি (General care and nutrition): অস্থি, পেশী ও শ্বাসযন্ত্রের যত্নের পাশাপাশি একজন এসএমএ রোগীর ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম লেভেল নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। পাশাপাশি পুষ্টি ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা জরুরি।
"জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে এসএমএ নিশ্চিত হওয়া রোগীর জন্য প্রযোজ্য। নির্দেশিকা অনুসরণ করার আগে চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন।"
অস্থি ও পেশীতন্ত্রের যত্ন (Musculoskeletal care)
একজন সুস্থ মানুষের শারীরিক গঠন ঠিক রাখা ও সার্বিক কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পেশী ও অস্থি (হাড়)। এসএমএ রোগীর পেশী ও অস্থি (Musculoskeletal System) প্রয়োজনীয় SMN (Survival Motor Neuron) নামক প্রোটিনের অভাবে ঠিকমতো কাজ করে না। ফলে এসএমএ আক্রান্ত রোগীর পেশী ও অস্থি প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মাসল বা মাংসপেশী তুলতুলে নরম হয়ে যায়; অস্থির সংযুক্ত পেশীগুলো শক্ত হয়ে যায়; অস্থি দুর্বল এবং সহজেই বেঁকে বা ভেঙে যায়।
■ অস্থি-সংযুক্তি বা জয়েন্ট পেশী কঠিন বা শক্ত হয়ে যাওয়া: এসএমএ আক্রান্ত শিশুরা
তাদের হাত ও পা নাড়াতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। এতে তাদের হাত ও পায়ের নড়াচড়া কমে যায়। এর ফলে অস্থির সংযুক্তি বা জয়েন্ট পেশীগুলো শক্ত বা Contractures হয়।
■ অস্থি বা হাড় ভাঙা: অস্থি বা হাড়ের খনিজ ঘনত্বের ঘাটতির কারণে এসএমএ আক্রান্ত শিশুদের হাড়ের শক্তি সীমিত থাকে। ফলে তাদের হাড় ভাঙার (Fractures) ঝুঁকি থাকে।
■ হিপ বা উরুসন্ধির স্থানচ্যুতি: এসএমএ রোগীদের হিপ বা উরুসন্ধিতে সমস্যা দেখা দেয়।
তাদের হিপ-জয়েন্ট বা উরুসন্ধিতে কিছু পরিবর্তন ঘটে। জয়েন্টের কাপের আকার অগভীর হওয়ার ফলে ফিমার অস্থিটি সকেট থেকে স্থানচ্যুত হয়ে যায়। এর ফলে হিপ-জয়েন্ট আর ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং পায়ের নড়াচড়া আরও কমে যায়।
■ মেরুদণ্ড বক্র ও কুঁজো হয়ে যাওয়া: ধড়ের (ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত) মাংসপেশীর
দুর্বলতার কারণে মেরুদণ্ড বাঁকা ও কুজো (Scoliosis and Kyphosis) হয়ে যায়। এর ফলে ফুসফুসের স্বাভাবিক প্রসারণ বাধাগ্রস্থ হয় এবং শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। এছাড়া খাবার গিলতেও সমস্যা হতে পারে।